![]() |
বারাকাহ |
আসসালামুয়ালাইকুম, আশা করি সবাই ভালো আছেন।সব বরকত ও কল্যাণের অধিকারী মহান আল্লাহ বলেন, تَبَارَكَ الَّذِي بِيَدِهِ الْمُلْكُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ ‘বরকতময় তিনি, যাঁর হাতে সকল রাজত্ব এবং তিনি সকল কিছুর উপর ক্ষমতাবান’ (মুলক -১)।
জীবনে বারাকা লাভের উপায় ১২টি
১.আল্লাহর ভয়
মহান আল্লাহ অন্যত্র বলেন, وَمَنْ يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَلْ لَهُ مَخْرَجًا وَيَرْزُقْهُ مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِبُ ‘আর যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্য উপায় বের করে দেন। আর তাকে তার ধারণাতীত উৎস থেকে রিযিক দান করবেন’ (তালাক্ব ২-৩)।
আরো বলেন, وَلَوْ أَنَّ أَهْلَ الْقُرَى آمَنُوا وَاتَّقَوْا لَفَتَحْنَا عَلَيْهِمْ بَرَكَاتٍ مِنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ وَلَكِنْ كَذَّبُوا فَأَخَذْنَاهُمْ بِمَا كَانُوا يَكْسِبُونَ ‘যদি জনপদের মানুষগুলো ঈমান আনতো এবং তাকওয়া অবলম্বন করতো তাহলে আমি তাদের ওপর আসমান-যমীনের যাবতীয় বরকতের দরজা খুলে দিতাম। কিন্তু তা না করে তারা মিথ্যা প্রতিপন্ন করলো। সুতরাং আমি তাদেরকে পাকড়াও করেছি তাদের কৃতকমের দরুণ’ (আ‘রাফ -৯)।
২.কোরআনের সাথে সম্পর্ক
আল্লাহ তাআলা একাধিক আয়াতে বলেন-- وَهَـذَا كِتَابٌ أَنزَلْنَاهُ مُبَارَكٌ فَاتَّبِعُوهُ وَاتَّقُواْ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ‘এটি এমন একটি কিতাব, যা আমি অবতীর্ণ করেছি, খুব মঙ্গলময়, অতএব, এর অনুসরণ কর এবং ভয় কর; যাতে তোমরা করুণাপ্রাপ্ত হও’(আনআম-১৫৫)।
৩.সুন্নাহ মানতে হবে
আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَمَا آتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوا
অর্থাৎ, আর রসূল তোমাদেরকে যা দেন তা তোমরা গ্রহণ কর এবং যা হতে তোমাদেরকে নিষেধ করেন তা হতে বিরত থাক (হাশর-৭)। তিনি আরো বলেন,
وَمَا يَنْطِقُ عَنِ الْهَوَى إِنْ هُوَ إِلا وَحْيٌ يُوحَى
অর্থাৎ, সে মনগড়া কথাও বলে না। তা তো অহী, যা তার প্রতি প্রত্যাদেশ হয় (নাজম ৩-৪)।তিনি আরো বলেন,
قُلْ إِنْ كُنْتُمْ تُحِبُّونَ اللهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ
অর্থাৎ, বল, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালবাস, তাহলে আমার অনুসরণ কর। ফলে আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের অপরাধসমূহ ক্ষমা করবেন (আলে ইমরান -৩১)।
৪.বেশি বেশি ইসতেগফার পড়া
রাসূল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি গুরুত্ব সহকারে ইস্তেগফার পড়ে আল্লাহ তাআলা তার প্রত্যেক অসুবিধায় মুক্তির পথ করে দেন,প্রত্যেক দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি দেন এবং এমন জায়গা থেকে রিজিক দেন যা তার কল্পনাও ছিল না (আবু দাউদ-১৫১৮)।
৫.দান করা
মহান আল্লাহ বলেন, ‘যদি তোমরা প্রকাশ্যে দান-সদকা কর, তবে তা কতই না উত্তম। আর যদি গোপনে ফকির-মিসকিনকে দান করে দাও, তবে আরো বেশি উত্তম। আর তিনি তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেবেন’ (বাকারা আয়ত-২৭১)।
৬.শুকরিয়া আদায় করা
আল্লাহতায়ালা বলেছেন,যদি তোমরা শুকরিয়া আদায় কর, তবে আমি অবশ্যই তোমাদের বাড়িয়ে দেব, আর যদি তোমরা অকৃতজ্ঞ হও, নিশ্চয়ই আমার আজাব বড় কঠিন' (ইব্রাহিম -৭)।
৭.সততা জীবনে বারাকাহ নিয়ে আসে
সততা মানবচরিত্রের শ্রেষ্ঠ গুণ।আল্লাহ বলেছেন, ‘মুমিন তো তারাই যারা আল্লাহ ও তার রাসুলের প্রতি ইমান এনেছে, অতঃপর তাতে কোনো সন্দেহে পতিত হয়নি এবং তাদের ধন-প্রাণ দিয়ে আল্লাহর পথে সংগ্রাম করেছে। তারাই তো সত্যবাদী’ (হুজুরাত-১৫)।
৮.রক্তের আত্মীয়-স্বজনদের সাথে সম্পর্ক ঠিক রাখা
আল্লাহ বলেন, ‘তারাই তো জ্ঞানবান যারা আল্লাহর প্রতিশ্রুতি পূরণ করে এবং অঙ্গীকার ভঙ্গ করে না। আর আল্লাহ আত্মীয়তার যে সম্পর্ক রক্ষা করার নির্দেশ দিয়েছেন, যারা তা অক্ষুন্ন রাখে, তাদের পালনকর্তাকে ভয় করে এবং কঠোর হিসাবের ভয় রাখে (আর-রাদ,২০-২১)।
৯.সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠা
মহান আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘আমি তোমাদের বিশ্রামের জন্য নিদ্রা দিয়েছি, তোমাদের জন্য রাত্রিকে করেছি আবরণস্বরূপ আর দিনকে বানিয়েছি তোমাদের কাজের জন্য’ (নাবা,৯-১১)।
১০.বিয়ে করা
রাসূল (সা.) বলেছেন,‘বিয়ে আমার সুন্নত। অতএব যে আমার সুন্নত পালন থেকে বিরত থাকবে, সে আমার অনুসারীদের অন্তর্ভুক্ত নয়’(সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১০৩৯০)। বিয়ে ইমানের অর্ধেক।
রাসূল (সা.) আরো বলেছেন, ‘কোন ব্যক্তি যখন বিয়ে করল তখন সে দ্বীনের অর্ধেকটা পূর্ণ করে ফেলল। এখন সে যেন বাকি অর্ধাংশের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করে।’-(মিশকাতুল মাসাবিহ ২৬৮)।
১১.সালাম বিনিময় করা এবং
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা ঈমানদার না হওয়া পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না, আর ঈমানদার হতে পারবে না পরস্পরে ভালোবাসা না হলে। তোমাদের কি এমন একটি বিষয়ের কথা বলব, যা করলে তোমাদের পরস্পরে ভালোবাসা সৃষ্টি হবে? তোমরা পরস্পরের মধ্যে ব্যাপকভাবে সালাম বিনিময় কর। ’ (মুসলিম-৫৪)।
১২.বারাকাহ জন্য দোয়া করা
কোরআনে কারিমে স্বয়ং আল্লাহতায়ালা নবী করিম (সা.)-এর জন্য দরূদ পাঠের তথা আল্লাহর দরবারে তার জন্য দোয়া করার আদেশ দিয়েছেন। এটা একদিকে যেমন আল্লাহর কাছে তার রাসূলের মর্যাদার প্রমাণ, অন্যদিকে মুমিন বান্দার রহমত ও বরকত লাভের অন্যতম উপায়।
এ প্রসঙ্গে কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ নবীর ওপর রহমত নাজিল করেন এবং ফেরেশতারা তার জন্য রহমতের দোয়া করেন। সুতরাং হে মুমিনগণ! তোমরাও তার প্রতি দরূদ পড় এবং অধিক পরিমাণে সালাম পাঠাও(আহজাব: ৫৬)।
রাসূল (সা.) বলেছেন,‘যে আমার ওপর একবার দরূদ পড়বে, বিনিময়ে আল্লাহ তার ওপর দশটি রহমত নাজিল করবেন। ’ (সহিহ মুসলিম:১/১৬৬)
"হে আল্লাহ আমাদের জীবনে যা দিয়েছেন তার মধ্যে বারাকাহ দিয়ে দিন।"__আমীন