![]() |
দাজ্জালের ভয়াবহ ফেতনা |
আসসালামুয়ালাইকুম, আশা করি সবাই ভালো আছেন। রাসূল (সা.) বলেছেন,‘ততক্ষণ পর্যন্ত কেয়ামত হবেনা যতক্ষণ না মুসলমানেরা ইহুদিদের সঙ্গে যুদ্ধ করবে। এরপর মুসলমানগণ ইহুদিদের হত্যা করবে। ইহুদিরা গাছ ও পাথরের আড়ালে পালাতে চেষ্টা করবে। কিন্তু কেউ তাদেরকে আশ্রয় দেবে না। গাছ বা পাথর বলবে, হে মুসলমান! হে আল্লাহর বান্দা! আমার পেছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে। আসো এবং তাকে হত্যা করো। তবে ‘গারকাদ’ নামক গাছের পিছনে লুকালে গারকাদ গাছ কোন কথা বলবেনা। এটি ইহুদিদের গাছ বলে পরিচিত। (মুসলিম, কিতাবুল ফিতান)
দাজ্জালের ভয়াবহ ফেতনা
দাজ্জাল কে?
মানব জাতিরই একজন দাজ্জাল। রাসূল (সা.) তার পরিচয় বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছেন। মুমিন বান্দাগণ তাকে দেখে সহজেই চিনতে পারবে এবং তার ফেতনা থেকে নিরাপদে থাকবে। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার যেসব পরিচয় উল্লেখ করেছেন মুমিনগণ তা পূর্ণ অবগত থাকবে। দাজ্জাল অন্যান্য মানুষের তুলনায় স্বতন্ত্র বৈশিষ্টের অধিকারী হবে। জাহেল-মূর্খ ও হতভাগ্য ছাড়া কেউ দাজ্জালের ধোকায় পড়বেনা। হযরত আনাস ইবনে মালেক রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, পৃথিবীতে এমন কোনো নবী প্রেরিত হননি যিনি স্বীয় উম্মতকে একচোখা মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বিষয়ে সতর্ক করে যাননি। মনে রেখো, সে হবে একচক্ষুহীন। পক্ষান্তরে তোমাদের প্রতিপালক একচক্ষুবিশিষ্ট নন। দাজ্জালের দু’চোখের মাঝে কাফের (كافر) লিখিত থাকবে। (সহীহ বুখারী; হাদীস ৬৫৯৮)
রাসূল (সা.) বলেছেন,দাজ্জালের ডান চোখ কানা হবে। তার দৃষ্টিহীন চক্ষুটি স্ফীত আঙ্গুর ফলের মত দৃশ্যমান হবে। (সহীহ বুখারী; হাদীস ৬৫৯০)।
তিনি আরো বলেন,দাজ্জালের বাম চক্ষু কানা হবে। সে এলোকেশী হবে। তার সাথে কৃত্রিম জান্নাত-জাহান্নাম থাকবে। তার জাহান্নাম হবে জান্নাত আর জান্নাত হবে জাহান্নাম। (সহীহ মুসলিম; হাদীস ৭৫৫১)।
তিনি আরো বলেছেন,আবির্ভাব কালে দাজ্জালের সাথে আগুন ও পানি থাকবে। মানুষ যেটাকে আগুন মনে করবে মূলত সেটা হবে শীতল পানি। আর যেটাকে শীতল পানি মনে করবে প্রকৃতপক্ষে সেটা হবে ঝলসানো আগুন। যদি তোমাদের কেউ দাজ্জালের সাক্ষাৎ লাভ করে তাহলে সে যেন অগ্নিতে প্রবেশ করে। কারণ সেটা তো সুমিষ্ট উৎকৃষ্ট পানি। (সহীহ মুসলিম; হাদীস ৭৫৫৫, সহীহ বুখারী; হাদীস ৭১৩০)।
দাজ্জালের ফেতনা গুলো
হযরত ইমরান বিন হুসাইন রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আদম আ. এর সৃষ্টির পর থেকে নিয়ে কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত দাজ্জালের চেয়ে বড় কোনো জটিল কঠিন সৃষ্ট বিষয় নেই। (সহীহ মুসলিম; হাদীস ৭৫৮২)। হযরত ইমরান ইবনে হুসাইন রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, আদম আ. এর সৃষ্টি থেকে নিয়ে কিয়ামত অবধি সংঘটিত ফিতনাসমূহের মধ্যে আল্লাহ তা‘আলার নিকট সবচেয়ে বড় ফিতনা হলো দাজ্জালের ফিতনা। (মুসতাদরাকে হাকেম; হাদীস ৮৬১০, সহীহ মুসলিম; হাদীস ২৯৪৬)।
হযরত উম্মে শুরাইক রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমি বলতে শুনেছি, দাজ্জালের ভয়ে পলায়ন করে মানুষ পাহাড়ে গিয়ে আশ্রয় নিবে। উম্মে শুরাইক রাযি. জিজ্ঞেস করলেন, আল্লাহর রাসূল! আরব সম্প্রদায় তখন কোথায় থাকবে? উত্তরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আরব সম্প্রদায় তখন সংখ্যায় অল্প থাকবে। (সহীহ মুসলিম; হাদীস ২৯৪৫)
তিনি আরো বলেন,গতিময় হবে তার পথচলা। এভাবে সে এক সম্প্রদায়ের কাছে গিয়ে নিজেকে প্রভু হিসেবে স্বীকার করে নেয়ার দাবি জানাবে। তারা দাজ্জালকে প্রভু হিসেবে স্বীকার করে নিবে এবং দাজ্জালের কথাকে তারা বিশ্বাস করবে। ফলে দাজ্জাল তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে আকাশকে তাদের উপর বৃষ্টি বর্ষণ করতে নির্দেশ দিবে। ফলে আকাশ বৃষ্টি বর্ষণ করবে। ভূমিকে নির্দেশ দিবে ফসল উৎপন্ন করতে। ভূমি ফসল উৎপন্ন করবে। সন্ধ্যাবেলা যখন তাদের গরু ছাগলগুলো মাঠ থেকে ফিরে আসবে তখন স্তনগুলো দুধে পরিপূর্ণ থাকবে। উদর স্ফীত থাকবে। অতঃপর দাজ্জাল অন্য এক সম্প্রদায়ের নিকট যাবে এবং নিজেকে প্রভু বলে স্বীকার করে নিতে তাদের নিকট দাবি জানাবে। তারা তাকে প্রভু হিসেবে স্বীকার করবে না। দাজ্জাল তাদের প্রতি অসন্তুষ্ট হয়ে চলে যাবে। ফলে তারা দুর্ভিক্ষের কবলে পড়ে যাবে। তাদের কোনো ধন-সম্পদই অবশিষ্ট থাকবে না। সবকিছুই নিঃশেষ হয়ে যাবে। দাজ্জাল এক অনুর্বর ভূমির পাশ দিয়ে অতিক্রম করবে। এ সময় ভূমিকে আদেশ করবে, তুমি তোমর গর্ভস্থ রত্নভাণ্ডার উন্মুক্ত করে দাও। ফলে ওই ভূমির সকল রত্ন-ভান্ডার বেরিয়ে এসে দাজ্জালের পিছনে পিছনে এমনভাবে চলতে থাকবে যেরূপ মৌমাছিরা তাদের রাণী মাছির পেছনে পেছনে দল বেঁধে চলতে থাকে। সে একজন বলিষ্ঠ যুবককে কাছে ডেকে তরবারীর আঘাতে দুই টুকরো করে দিবে। লাশের দু’টি টুকরো এতটা দূরত্বে ছিটকে পড়বে যতোটা দূরত্বে লক্ষ্যবস্তুর দিকে নিক্ষেপিত তীর গিয়ে পড়ে। অতঃপর দাজ্জাল দ্বিখণ্ডিত সে যুবককে আহবান করলে যুবকটি সংযুক্ত হয়ে উঠে চলে আসবে। এভাবে তার ভয়াবহ ফিতনা বিশ্ব জুড়ে চলতে থাকবে। সর্বশেষে ঈসা ইবনে মারইয়ামকে আল্লাহ তা‘আলা আকাশ থেকে প্রেরণ করবেন। (সহীহ মুসলিম; হাদীস ২৯৩৭)।
দাজ্জালের ক্ষমতায় মানুষ বিভ্রান্ত
১. একস্থান থেকে অন্য স্থানে দ্রুত পরিভ্রমণ।
২. দাজ্জালের সঙ্গে থাকবে জান্নাত-জাহান্নাম।
৩. দাজ্জাল মৃত ব্যক্তিকে জীবিত করবে।
৪. জড় পদার্থ ও পশুরাও দাজ্জালের ডাকে সাড়া দেবে।
৫. দাজ্জাল একজন মুমিন যুবককে হত্যা করে পুনরায় জীবিত করবে।
ইত্যাদি রকমের ভয়াবহ ফেতনা সৃষ্টি হবে।
দাজ্জালের ফেতনা থেকে বাঁচার উপায়
আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন আজাবিল কাবরি, ওয়া মিন আজাবিন্নারি, ওয়া মিন ফিতনাতিল মাহইয়া ওয়াল মামাতি, ওয়া মিন ফিতনাতিল মাসিহিদ দাজ্জাল।
অর্থ : হে আল্লাহ আমি আপনার কাছে কবরের শাস্তি, জাহান্নামের শাস্তি, জীবন-মৃত্যুর ফেতনা ও দাজ্জালের ফেতনা থেকে আশ্রয় চাই।
যে যে কাজ গুলো আমাদের করা উচিত
১.তাকওয়া অবলম্বন
২.ভালো কাজ করা
৩.জামাতবদ্ধ থাকা
৪.কোরআন ও সুন্নাহর বিধান আঁকড়ে ধরা
৫.ফেতনা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা
৬.আল্লাহর সিদ্ধান্তের প্রতি সন্তুষ্ট থাকা
৭.বিভ্রান্তিকর প্রচারণা থেকে সাবধান থাকা
৮.ইবাদতে লিপ্ত থাকা
৯.মুমিনদের সঙ্গে বন্ধুত্ব রাখা
১০.ফেতনার সময় ধৈর্যধারণ করা
১১.তওবা-ইস্তেগফার করা
১২.দ্বীনি জ্ঞানার্জনে গুরুত্ব দেয়া
১৩.স্বস্তি ও আশার বাণী প্রচার করা
১৪.আল্লাহর চিরন্তন রীতির বাস্তবায়ন
১৫.সম্পদের ফেতনা
এছাড়া ও আল্লাহ কাছে বেশি বেশি দোয়া করা।যেন আল্লাহ আমাদের দাজ্জালের ভয়াবহ ফেতনা থেকে রক্ষা করেন।আমীন।